Pick Your VISA
ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা 2025 | আবেদন পদ্ধতি, ডকুমেন্ট লিস্ট ও খরচ বিস্তারিত!

ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা 2025 | আবেদন পদ্ধতি, ডকুমেন্ট লিস্ট ও খরচ বিস্তারিত!

আপনি যদি ২০২৫ সালে ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা নিয়ে ভ্রমণের পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে আপনাকে একটি শেনজেন ট্যুরিস্ট ভিসা (Schengen Tourist Visa – Type C) এর জন্য আবেদন করতে হবে। এই ভিসা আপনাকে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য ফ্রান্সসহ অন্যান্য শেনজেন দেশগুলোতে ভ্রমণের অনুমতি দেয়।

বাংলাদেশ থেকে যারা ফ্রান্সে টুরিস্ট ভিসায় যেতে চান, তাদের মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। কীভাবে শুরু করবেন, কী কী লাগবে, কত খরচ হবে এমন হাজারো প্রশ্ন।

চিন্তা নেই! এই ব্লগ পোস্টটি আপনার সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই তৈরি করা হয়েছে। আমরা আপনাকে ধাপে ধাপে বুঝিয়ে দেবো ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা আদ্যোপান্ত। এই লেখাটি পড়ার পর আপনার মনে আর কোনো সংশয় থাকবে না, বরং আপনি আত্মবিশ্বাসের সাথে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তাহলে আর দেরি কেন? চলুন, স্বপ্নের ফ্রান্সের পথে যাত্রা শুরু করি!

সূচিপত্র

ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা  (স্বপ্নের পথে এক ধাপ)

ফ্রান্সে শুধু আইফেল টাওয়ার আর লুভর মিউজিয়ামই নেই, সেখানে আছে আল্পসের বরফ ঢাকা চূড়া, প্রোভেন্সের ল্যাভেন্ডার ক্ষেত, আর কোত দাজুরের ঝলমলে সমুদ্র সৈকত। ফ্রান্সের ইতিহাস, সংস্কৃতি, আর শিল্পকলা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। কিন্তু এই অসাধারণ অভিজ্ঞতা পেতে হলে প্রথমে আপনাকে পেতে হবে ফ্রান্সের টুরিস্ট ভিসা। অনেকেই মনে করেন ভিসা প্রক্রিয়া বেশ জটিল, কিন্তু সঠিক নির্দেশনা মেনে চললে এটি আসলে খুব কঠিন নয়।

আরও দেখুনঃ ফ্রান্সের টুরিস্ট ভিসা তে এসে কি নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে ? France Visa Update 2023-2024

সৌজন্যঃ Engr Rakibul islam NayoN

ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া (ধাপে ধাপে নির্দেশনা)

ফ্রান্সের টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হয়। এই ধাপগুলো সঠিকভাবে মেনে চললে আপনার ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে যাবে।

ধাপ ১: যোগ্যতা যাচাই ও তথ্য সংগ্রহ

প্রথমেই আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে আপনি ভিসার জন্য যোগ্য কিনা। এর জন্য France-Visas ওয়েবসাইটে গিয়ে “Visa Wizard” ব্যবহার করতে পারেন। এখানে আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য, সময়কাল, এবং নাগরিকত্ব সংক্রান্ত তথ্য দিলে জানতে পারবেন আপনার জন্য কোন ধরনের ভিসা প্রয়োজন এবং কী কী কাগজপত্র লাগবে। এটা ঠিক যেন আপনার ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসার জন্য একটা প্রাথমিক স্ক্রিনিং!

ধাপ ২: ভিসা আবেদন ফর্ম পূরণ

এবার পালা ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা আবেদন ফর্ম পূরণের। আপনি অনলাইনে France-Visas ওয়েবসাইট থেকে ফর্ম পূরণ করতে পারেন এবং প্রিন্ট করে নিতে পারেন। অথবা VFS Global ওয়েবসাইট থেকেও ফর্ম ডাউনলোড করে ম্যানুয়ালি পূরণ করতে পারেন। ফর্ম পূরণের সময় প্রতিটি তথ্য নির্ভুলভাবে দেওয়া খুবই জরুরি। কোনো ভুল তথ্য আপনার আবেদন বাতিল করে দিতে পারে।

ধাপ ৩: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করুন

ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা আবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো সঠিক ও সম্পূর্ণ কাগজপত্র প্রস্তুত করা। এটি আপনার ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসার আবেদন প্রক্রিয়ার মেরুদণ্ড। কোনো একটি কাগজ অসম্পূর্ণ থাকলে কিংবা ভুল তথ্য থাকলে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে। তাই এই ধাপে আপনাকে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে।

ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা

  • বৈধ পাসপোর্টঃ আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে এবং ভিসার স্ট্যাম্প লাগানোর জন্য অন্তত দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠা থাকতে হবে।
  • পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফর্মঃ অনলাইনে পূরণ করা ফর্ম প্রিন্ট করে অথবা হাতে পূরণ করা ফর্ম জমা দিতে হবে।
  • সম্প্রতি তোলা পাসপোর্ট সাইজ ছবিঃ দুটি রঙিন ছবি, সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে, সাইজ ৩৫মিমি x ৪৫মিমি, যা গত ৬ মাসের মধ্যে তোলা হয়েছে। ছবি তোলার সময় আপনার মুখ সোজা এবং কান দেখা যাওয়া উচিত।
  • ভিসা ফি পরিশোধের রসিদঃ ভিসার আবেদন ফি জমা দেওয়ার পর প্রাপ্ত রসিদ।
  • ভ্রমণের উদ্দেশ্য প্রমাণঃ
    • ফ্লাইট টিকিট রিজার্ভেশন (আসা-যাওয়ার)।
    • ট্র্যাভেল ইটিনারারি বা ভ্রমণ পরিকল্পনা (কোথায় যাবেন, কী কী দেখবেন, কতদিন থাকবেন তার বিস্তারিত)।
    • যদি কোনো ইভেন্টে যোগ দেন, তাহলে সেই ইভেন্টের টিকিট।
  • আবাসন প্রমাণঃ
    • হোটেল রিজার্ভেশন (আপনার পুরো ভ্রমণের সময়ের জন্য)।
    • যদি কোনো বন্ধুর বা আত্মীয়ের বাড়িতে থাকেন, তাহলে তাদের ইনভিটেশন লেটার (Letter of Invitation/Attestation d’accueil) এবং তাদের আইডি প্রুফ।
  • আর্থিক সামর্থ্য প্রমাণঃ
    • ব্যাংক স্টেটমেন্ট: গত ৩-৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ দেখানো হয়েছে। প্রতি দিনের জন্য কমপক্ষে €৬৫-€১২০ (হোটেল রিজার্ভেশন থাকলে কম) খরচ করার মতো তহবিল থাকা উচিত।
    • ইনকাম প্রমাণপত্রঃ
      • চাকরিজীবীদের জন্যঃ স্যালারি স্লিপ (গত ৩-৬ মাস), নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC) এবং ছুটির আবেদনপত্র।
      • ব্যবসায়ীদের জন্যঃ ট্রেড লাইসেন্স, বিজনেস ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ট্যাক্স রিটার্ন পেপার।
      • শিক্ষার্থীদের জন্যঃ স্টুডেন্ট আইডি কার্ড, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট।
  • ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্সঃ শেনজেন এলাকার জন্য প্রযোজ্য ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্স, যার কভারেজ ন্যূনতম €৩০,০০০ হবে এবং যা জরুরি চিকিৎসা ও দেশে ফেরানোর খরচ বহন করবে।
  • ইনভিটেশন লেটার (যদি প্রযোজ্য হয়): যদি ফ্রান্সের কেউ আপনাকে আমন্ত্রণ জানায়, তাহলে তাদের কাছ থেকে একটি আমন্ত্রণপত্র, যেখানে আপনার থাকার ব্যবস্থা এবং খরচের দায়িত্বের কথা উল্লেখ থাকবে।
  • দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রমাণঃ
    • আপনার কর্মসংস্থান, পারিবারিক সম্পর্ক, বা সম্পত্তি সংক্রান্ত প্রমাণ (যেমন, চাকরির চুক্তি, ম্যারেজ সার্টিফিকেট, সম্পত্তির দলিল)। এটি দূতাবাসকে বোঝাবে যে আপনি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দেশে ফিরে আসবেন।

ধাপ ৪: অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করুন

আপনার সব কাগজপত্র প্রস্তুত হয়ে গেলে এবার ভিএফএস গ্লোবাল (VFS Global) ওয়েবসাইটে গিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে হবে। ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা আবেদন ভিএফএস গ্লোবাল সেন্টারের মাধ্যমে জমা দিতে হয়। অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ এবং সময় সাবধানে বেছে নিন। সাধারণত, অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে কিছুটা সময় লাগতে পারে, তাই আগে থেকেই বুকিং দেওয়া ভালো।

ধাপ ৫: বায়োমেট্রিক ও ডকুমেন্ট জমা দিন

নির্ধারিত তারিখে ভিএফএস গ্লোবাল সেন্টারে উপস্থিত হন। এখানে আপনাকে আপনার আবেদন ফর্ম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং বায়োমেট্রিক তথ্য (আঙুলের ছাপ ও ছবি) জমা দিতে হবে। মনে রাখবেন, সব আসল কাগজপত্র সাথে রাখবেন, যদিও সাধারণত ফটোকপি জমা দিতে হয়। কর্মকর্তারা আসল কাগজপত্র দেখতে চাইতে পারেন।

ধাপ ৬: ভিসা ফি পরিশোধ ও আবেদন ট্র্যাক করুন

কাগজপত্র জমা দেওয়ার সময় আপনাকে ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসার ফি পরিশোধ করতে হবে। ফি পরিশোধের পর আপনাকে একটি রসিদ দেওয়া হবে, যেখানে আপনার আবেদনের ট্র্যাকিং নম্বর থাকবে। এই নম্বর দিয়ে আপনি অনলাইনে আপনার ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা আবেদনের অবস্থা ট্র্যাক করতে পারবেন।

ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসার খরচ

ভিসা ফি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা অনেকের মনেই প্রশ্ন তৈরি করে। ফ্রান্সের টুরিস্ট ভিসার খরচ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভিন্ন হয়।

আবেদনকারী ফি (ইউরো)
প্রাপ্তবয়স্ক €৯০
৬-১২ বছর €৪৫
৬ বছরের নিচে শিশু ফ্রি
VFS সার্ভিস ফি প্রায় €২২ (স্থানীয় মুদ্রায়)

বিশেষ ছাড়ঃ কিছু ক্ষেত্রে ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা আবেদনকারীরা ফি ছাড় পেতে পারেন। যেমনঃ

  • শিক্ষার্থী (নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে)
  • গবেষক
  • কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী ব্যক্তি

এই ফিগুলো পরিবর্তন হতে পারে, তাই আবেদন করার আগে ফ্রান্সের দূতাবাস বা ভিএফএস গ্লোবালের ওয়েবসাইটে সর্বশেষ তথ্য যাচাই করে নেওয়া আবশ্যক।

ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা প্রসেসিং টাইম  বা কতদিন লাগতে পারে?

সাধারণত, ফ্রান্সের টুরিস্ট ভিসার প্রসেসিং টাইম ৭-১৫ কার্যদিবস। তবে কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে পিক সিজনে (যেমন গ্রীষ্মকাল বা ছুটির সময়), এই সময় আরও বেশি লাগতে পারে। অপ্রত্যাশিত বিলম্ব এড়াতে, আপনার ভ্রমণের কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ আগে ভিসার জন্য আবেদন করা উচিত। এতে আপনার হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকবে যদি কোনো অতিরিক্ত কাগজপত্র প্রয়োজন হয় বা কোনো সমস্যা দেখা দেয়।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ যা আপনাকে মনে রাখতে হবে

  • সঠিক জায়গায় যোগাযোগঃ ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা আবেদন জমা দেওয়ার জন্য ফ্রান্সের দূতাবাস বা কনস্যুলেট-এর আওতাধীন VFS Global সেন্টার-এ যোগাযোগ করুন।
  • মেয়াদঃ শেনজেন টুরিস্ট ভিসা সাধারণত ৯০ দিনের জন্য বৈধ থাকে (১৮০ দিনের মধ্যে)। যদি আপনি ৯০ দিনের বেশি ফ্রান্সে থাকতে চান, তাহলে আপনাকে লং-স্টে ভিসা (Visa de long séjour) এর জন্য আবেদন করতে হবে।
  • সর্বশেষ তথ্যঃ ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা আবেদন করার আগে, সবসময় ফ্রান্সের দূতাবাস বা VFS Global-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সর্বশেষ তথ্য ও নীতিমালা যাচাই করে নিন। ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা নীতিমালায় যেকোনো সময় পরিবর্তন আসতে পারে।

ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানোর টিপস

ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা পাওয়াটা কিছুটা ভাগ্যের ব্যাপার হলেও, কিছু টিপস অনুসরণ করলে আপনার ভিসার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়ঃ

  • সঠিক, স্পষ্ট ও নির্ভুল কাগজপত্র প্রদান করুনঃ আপনার দেওয়া প্রতিটি তথ্য এবং কাগজপত্র ১০০% সঠিক ও স্পষ্ট হতে হবে। কোনো ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য আপনার আবেদন বাতিল করে দিতে পারে।
  • পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সামর্থ্য প্রমাণ করুনঃ আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্টে পর্যাপ্ত তহবিল দেখানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি দূতাবাসকে বোঝাবে যে আপনি ফ্রান্সে থাকার সময় নিজের খরচ চালাতে সক্ষম।
  • দেশে ফেরার ইচ্ছা স্পষ্ট করুনঃ আপনি যে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশে ফিরে আসবেন, তার দৃঢ় প্রমাণ দিন। এর জন্য আপনি আপনার চাকরির প্রমাণপত্র, পারিবারিক সম্পর্ক (যেমন, ম্যারেজ সার্টিফিকেট, সন্তানদের জন্ম সনদ), বা দেশে থাকা সম্পত্তির দলিল জমা দিতে পারেন।
  • পেশাদারভাবে কভার লেটার লিখুনঃ আপনার কভার লেটারটি পরিষ্কার, সংক্ষিপ্ত এবং পেশাদার হতে হবে। এতে আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য, তারিখ এবং আপনি কেন ফ্রান্সে যেতে চান তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন।

এক নজরে  ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা

  • ভিসা প্রক্রিয়া সহজঃ সঠিক কাগজপত্র এবং ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে ভিসা পাওয়া সহজ।
  • আর্থিক সচ্ছলতা জরুরিঃ আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্টে পর্যাপ্ত তহবিল দেখানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • ভিসা ফিঃ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য €৯০, ৬-১২ বছর বয়সীদের জন্য €৪৫, এবং ৬ বছরের নিচের শিশুদের জন্য ফ্রি। VFS সার্ভিস ফি প্রায় €২২।
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ পাসপোর্ট, ভিসা ফর্ম, ছবি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ইনকাম প্রুফ, ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্স, হোটেল রিজার্ভেশন ইত্যাদি।
  • আবেদনের সময়ঃ ভ্রমণের কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ আগে আবেদন করা বুদ্ধিমানের কাজ।
  • সঠিক তথ্য দিনঃ সব তথ্য নির্ভুল ও স্পষ্ট হওয়া উচিত।
  • দেশে ফেরার প্রমাণঃ কর্মসংস্থান, পরিবার বা সম্পত্তির মাধ্যমে দেশে ফেরার দৃঢ় ইচ্ছা প্রমাণ করা জরুরি।

বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্সে স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে কত টাকা লাগে?

ফ্রান্সে স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে খরচের পরিমাণ টুরিস্ট ভিসার থেকে ভিন্ন হয়। এখানে মূলত দুটি প্রধান খরচ থাকে: ভিসা আবেদন ফি এবং জীবনযাত্রার খরচ।

  • ভিসা আবেদন ফিঃ শেনজেন স্টুডেন্ট ভিসার জন্য সাধারণত €৫০-€৯৯ (ইউরো) এর মধ্যে হয়ে থাকে। তবে, এটি ফ্রান্সের দূতাবাস বা কনস্যুলেটের নিয়ম অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। VFS Global সার্ভিস চার্জ অতিরিক্ত।
  • জীবনযাত্রার খরচঃ এটি নির্ভর করে আপনি কোন শহরে পড়ছেন এবং আপনার লাইফস্টাইলের ওপর। প্যারিসের মতো বড় শহরে খরচ বেশি, যেখানে ছোট শহরে কম। সাধারণত প্রতি মাসে €৬০০-€১০০০ (ইউরো) জীবনযাত্রার খরচ ধরা হয়। এর মধ্যে থাকা-খাওয়া, যাতায়াত, বইপত্র এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত খরচ অন্তর্ভুক্ত। ভিসা আবেদনের সময় আপনাকে অন্তত এক বছরের জীবনযাত্রার খরচ দেখানোর মতো আর্থিক সচ্ছলতা প্রমাণ করতে হবে।
  • টিউশন ফিঃ এটি নির্ভর করে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় এবং কোর্সের ওপর। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি সাধারণত কম হয়, যেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশি হতে পারে।

ফ্রান্স ট্যুরিস্ট ভিসা করতে কত ব্যাংক ব্যালেন্স লাগে?

ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ব্যাংক ব্যালেন্সের পরিমাণ বলা কঠিন, কারণ এটি আপনার ভ্রমণের দৈর্ঘ্য এবং আপনার থাকার ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। তবে, শেনজেন ভিসা নীতি অনুযায়ী, প্রতি দিনের জন্য আপনার কাছে গড়ে €৬৫ থেকে €১২০ (ইউরো) খরচ করার মতো তহবিল থাকা উচিত।

  • যদি আপনার হোটেল রিজার্ভেশন থাকে এবং আপনি হোটেলের খরচ আগেই পরিশোধ করে থাকেন, তাহলে প্রতিদিনের জন্য কমপক্ষে €৬৫ ইউরো।
  • যদি আপনার হোটেল রিজার্ভেশন না থাকে এবং আপনি ফ্রান্সে গিয়ে থাকার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান, তাহলে প্রতিদিনের জন্য কমপক্ষে €১২০ ইউরো।

সুতরাং, যদি আপনি ১০ দিনের জন্য ফ্রান্সে যান, তাহলে আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্টে কমপক্ষে €৬৫০ থেকে €১২০০ ইউরো (বা সমপরিমাণ বাংলাদেশি টাকা) থাকা উচিত। তবে, যত বেশি টাকা আপনি দেখাতে পারবেন, আপনার ভিসার সম্ভাবনা তত বাড়বে। সাধারণত, ৩-৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হয়, যেখানে আপনার আর্থিক সচ্ছলতা বোঝা যায়।

ফ্রান্স ট্যুরিস্ট ভিসার দাম কত?

ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসার দাম নিচে একটি সারণীতে দেখানো হলোঃ

আবেদনকারী ফি (ইউরো)
প্রাপ্তবয়স্ক €৯০
৬-১২ বছর €৪৫
৬ বছরের নিচে শিশু ফ্রি
VFS সার্ভিস ফি প্রায় €২২ (স্থানীয় মুদ্রায়)

এই ফিগুলো ইউরোতে পরিশোধ করতে হয় এবং বাংলাদেশি টাকায় এর সমপরিমাণ অর্থ VFS Global সেন্টারে জমা দিতে হয়।

ফ্রান্স ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য কি কি লাগে?

ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসার জন্য যা যা লাগে, তার একটি বিস্তারিত তালিকা উপরে “প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা” অংশে দেওয়া হয়েছে। সংক্ষেপে, প্রধানত যা লাগবেঃ

  • বৈধ পাসপোর্ট
  • পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফর্ম
  • সম্প্রতি তোলা পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • ভিসা ফি পরিশোধের রসিদ
  • ফ্লাইট টিকিট রিজার্ভেশন ও ট্র্যাভেল ইটিনারারি
  • হোটেল রিজার্ভেশন
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট (গত ৩-৬ মাসের)
  • ইনকাম প্রমাণপত্র (স্যালারি স্লিপ, ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স রিটার্ন ইত্যাদি)
  • ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্স (ন্যূনতম €৩০,০০০ কভারেজ)
  • ইনভিটেশন লেটার (যদি প্রযোজ্য হয়)
  • দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রমাণ (চাকরি, পরিবার, সম্পত্তি)

ফ্রান্স ট্যুরিস্ট ভিসা পাওয়া কি কঠিন?

ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা পাওয়া কঠিন, এমনটা বলা যাবে না, তবে এটি নির্ভর করে আপনার আবেদনের গুণগত মানের ওপর। যদি আপনি সব কাগজপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত করেন, আর্থিক সচ্ছলতা প্রমাণ করতে পারেন এবং দেশে ফেরার দৃঢ় ইচ্ছা দেখাতে পারেন, তাহলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

কিছু বিষয় আছে যা ভিসা পাওয়াকে কঠিন করে তুলতে পারেঃ

  • অসম্পূর্ণ বা ভুল কাগজপত্রঃ এটি ভিসা বাতিলের অন্যতম প্রধান কারণ।
  • আর্থিক অসামর্থ্যঃ যদি আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্টে পর্যাপ্ত তহবিল না থাকে।
  • দেশে ফেরার প্রমাণ না থাকাঃ যদি দূতাবাস মনে করে আপনি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দেশে ফিরবেন না।
  • ভিসা ইন্টারভিউতে অসংলগ্নতাঃ যদিও টুরিস্ট ভিসার জন্য সাধারণত ইন্টারভিউ হয় না, তবে যদি হয় এবং আপনি সঠিক উত্তর দিতে না পারেন।
  • আগের ভিসার নিয়ম ভঙ্গঃ অতীতে যদি আপনি কোনো শেনজেন ভিসার নিয়ম ভঙ্গ করে থাকেন।

সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিলে এবং সৎ ও নির্ভুল তথ্য দিলে ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা পাওয়া মোটেও কঠিন নয়।

বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্স ভিসা ফি কত?

বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্স ভিসার ফি ইউরোতে নির্ধারিত এবং বাংলাদেশি টাকায় এর সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়। ফিগুলো সাধারণত নিম্নরূপঃ

  • প্রাপ্তবয়স্কঃ €৯০ (ইউরো)
  • ৬-১২ বছরঃ €৪৫ (ইউরো)
  • ৬ বছরের নিচে শিশুঃ ফ্রি
  • VFS সার্ভিস ফিঃ প্রায় €২২ (ইউরো)

এই ফিগুলো VFS Global সেন্টারে জমা দিতে হয়। ভিসার আবেদন করার আগে বর্তমান এক্সচেঞ্জ রেট অনুযায়ী বাংলাদেশি টাকায় কত হবে তা জেনে নেওয়া ভালো।

আরও পড়ুনঃ অস্ট্রেলিয়া ভিজিট ভিসা ফি, প্রসেসিং টাইম ও নতুন নিয়ম জানলে অবাক হবেন!

🔗 গুরুত্বপূর্ণ লিংকঃ

🔹 VFS Global (বাংলাদেশ) – ভিসা জমা ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং

🔹 France-Visas (Official Site) – আবেদন ফর্ম, তথ্য যাচাই ও নির্দেশিকা

🔹 French Embassy in Bangladesh – স্থানীয় নীতিমালা ও যোগাযোগ

 

শেষ কথা

ফ্রান্সের টুরিস্ট ভিসা পাওয়া হয়তো প্রথম দিকে একটু কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু ধাপে ধাপে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে এবং প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দিলে আপনার স্বপ্নের ফ্রান্স যাত্রা খুব কঠিন হবে না। মনে রাখবেন, আপনার প্রতিটি তথ্য যেন নির্ভুল ও স্পষ্ট হয়, এবং আপনি যেন আপনার আর্থিক সচ্ছলতা ও দেশে ফেরার দৃঢ় ইচ্ছা প্রমাণ করতে পারেন।

আমরা আশা করি, এই বিস্তারিত গাইডলাইন আপনাকে ফ্রান্সের টুরিস্ট ভিসার আবেদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে সাহায্য করবে। এখন আপনার পালা, প্রস্তুতি নিন, আবেদন করুন, আর উপভোগ করুন স্বপ্নের ফ্রান্সের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য! আপনার যদি আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা আপনার পাশে আছি! শুভ কামনা!

Md Mahmud Hasan

A dedicated entrepreneur and SEO strategist. At 'Hasan Hive, Bengal Deal, Pick Your VISA & More,' he helps businesses enhance their online presence and achieve impressive results through innovative digital marketing solutions.

1 comment

Recent posts