বেলারুশ কি সেনজেন ভুক্ত দেশ? 2025-এর আপডেট জানুন!

বেলারুশ কি সেনজেন ভুক্ত দেশ? আসুন জেনে নেই বিস্তারিত সকল কিছু। ইউরোপ ঘুরতে কে না ভালোবাসে, বলুন? কিন্তু ইউরোপের দেশগুলোতে ভিসা আর নিয়মকানুন নিয়ে অনেকেরই একটু ভীতি কাজ করে। বিশেষ করে সেনজেন ভিসা নিয়ে প্রশ্ন যেন থামতেই চায় না! আজকের আলোচনা বেলারুশ নিয়ে। বেলারুশ কি সেনজেন ভুক্ত দেশ, তা নিয়ে অনেকের মনে ধোঁয়াশা আছে। তাই, আসুন জেনে নেই বেলারুশ সেনজেন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত কিনা, আর যদি না হয়, তাহলে বেলারুশ থেকে সেনজেনভুক্ত দেশে যেতে কী করতে হবে, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত।

বেলারুশ কি সেনজেন ভুক্ত দেশ?

বেলারুশ কি সেনজেন ভুক্ত দেশ? সোজাসাপ্টা উত্তর হলো, না। বেলারুশ সেনজেন ভুক্ত দেশ নয়। সেনজেন চুক্তি মূলত ইউরোপের কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি চুক্তি, যেখানে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অবাধে চলাচল করা যায়, কোনো ভিসা লাগে না। বেলারুশ এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই বেলারুশকে একটি নন-শেনজেন দেশ হিসেবে ধরা হয়।

সেনজেন এলাকা কি এবং কারা এর সদস্য?

সেনজেন এলাকা হলো ইউরোপের ২৯টি দেশের একটি বিশেষ অঞ্চল। এই দেশগুলোর মধ্যে আপনি যদি একটি ভিসার মালিক হন, তাহলে অন্য দেশগুলোতেও ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারবেন। অনেকটা Common Travel Area-এর মতো, যেখানে এক দেশে ভিসা থাকলে অন্য দেশে যাওয়ার জন্য ভিসার প্রয়োজন হয় না। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সেনজেনভুক্ত দেশের নাম দেওয়া হলো, যাতে আমরা সহজেই জানতে পারি বেলারুশ কি সেনজেন ভুক্ত দেশ কিনাঃ

• জার্মানি
• ফ্রান্স
• ইতালি
• স্পেন
• নেদারল্যান্ডস
• সুইজারল্যান্ড
• নরওয়ে
• সুইডেন

(সর্বশেষ তালিকা ২০২৫ অনুযায়ী)

আরও দেখুনঃ Belarus🇧🇾বেলারুশ যেতে কত টাকা লাগে ? আপনি বেলারুশ গেলে বেতন কত টাকা পাবেন ?

সৌজন্যঃ Europe Explain

কোন দেশগুলো সেনজেনভুক্ত নয়?

ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ আছে, যারা সেনজেন চুক্তির অন্তর্ভুক্ত নয়। বেলারুশ তাদের মধ্যে অন্যতম। নিচে কয়েকটি দেশের নাম দেওয়া হলো, যেটা দেখলেই আমরা জানতে পারবো বেলারুশ কি সেনজেন ভুক্ত দেশ কিনা। দেশ গুলো হলোঃ

• আলবেনিয়া
• আর্মেনিয়া
• আজারবাইজান
• বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
• সাইপ্রাস
• জর্জিয়া
• আয়ারল্যান্ড
• কসোভো
• মলদোভা
• মন্টেনেগ্রো
• উত্তর মেসিডোনিয়া
• রাশিয়া
• সার্বিয়া
• তুরস্ক
• ইউক্রেন
• যুক্তরাজ্য
• আন্ডোরা
• সান মারিনো
• মোনাকো
• ভ্যাটিকান সিটি

কেন বেলারুশ সেনজেন চুক্তিতে নেই?

বেলারুশ কি সেনজেন ভুক্ত দেশ? বেলারুশ কেন সেনজেন চুক্তিতে নেই, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। এর কিছু কারণ রয়েছে। চলুন, কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক, এবং বেলারুশ কি সেনজেন ভুক্ত দেশ কি না।

• ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের জটিলতাঃ বেলারুশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনৈতিক সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। বিভিন্ন কারণে দুই পক্ষের মধ্যে প্রায়ই মতবিরোধ দেখা যায়।
• মানবাধিকার ও রাজনৈতিক বিষয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগঃ মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণেও বেলারুশ সেনজেন চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি।
• ইইউ’র অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা নীতির সাথে সামঞ্জস্যহীনতাঃ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক কিছু নীতি আছে, যেগুলোর সঙ্গে বেলারুশের নীতি মেলে না।

এসব কারণেই বেলারুশ এখনও সেনজেন চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি।

বেলারুশ থেকে সেনজেন দেশে যেতে হলে কি করতে হবে?

যেহেতু বেলারুশ সেনজেনভুক্ত দেশ নয়, তাই বেলারুশের কোনো নাগরিক যদি সেনজেনভুক্ত কোনো দেশে যেতে চান, তাহলে তাকে অবশ্যই ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। কীভাবে এই ভিসার জন্য আবেদন করবেন, সেই বিষয়ে নিচে একটি ধারণা দেওয়া হলোঃ

১. ভিসার জন্য আবেদনঃ প্রথমে আপনাকে যে দেশে যেতে চান, সেই দেশের দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।

২. প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ এরপর আপনার পাসপোর্ট, আমন্ত্রণপত্র (Invitation Letter), আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্রসহ (Financial Proof) দরকারি কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

৩. ভিসা ফিঃ ভিসার জন্য আবেদন করার সময় আপনাকে নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে।

৪. ইন্টারভিউঃ কিছু ক্ষেত্রে ইন্টারভিউয়ের প্রয়োজন হতে পারে।

ভিসা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য জেনে সঠিকভাবে আবেদন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

বেলারুশের নাগরিকদের ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা কেমন?

২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বেলারুশের ১.৬ লাখের বেশি নাগরিক সেনজেন ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন। এখন প্রশ্ন হলো, তাদের ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা কেমন? সাধারণত, এটি নির্ভর করে আবেদনকারীর দেওয়া তথ্যের ওপর। যদি আপনার সব কাগজপত্র ঠিক থাকে এবং আপনি ভিসার জন্য যোগ্য হন, তাহলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

ETIAS: ২০২৬ সাল থেকে নতুন নিয়ম

২০২৬ সাল থেকে ইউরোপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নতুন একটি নিয়ম চালু হতে যাচ্ছে, যার নাম ETIAS (European Travel Information and Authorisation System)। এটি মূলত ভিসা-মুক্ত ভ্রমণকারীদের জন্য একটি পূর্ব-অনুমোদন ব্যবস্থা।

ETIAS কী এবং কেন প্রয়োজন?

ETIAS হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি নতুন নিয়ম, যা ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে। এর মাধ্যমে ভিসা ছাড়া ইউরোপে যেতে ইচ্ছুক এমন নাগরিকদের একটি অনলাইন ফর্ম পূরণ করে পূর্ব-অনুমোদন নিতে হবে। এটি মূলত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য করা হয়েছে।

বেলারুশের জন্য ETIAS এর প্রভাব

বেলারুশ যেহেতু সেনজেন চুক্তির অন্তর্ভুক্ত নয়, তাই বর্তমানে বেলারুশের নাগরিকদের সেনজেনভুক্ত দেশে যেতে ভিসা লাগে। তবে, ভবিষ্যতে যদি বেলারুশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভিসা-মুক্ত ভ্রমণের তালিকায় যুক্ত হয়, তাহলে ETIAS তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে।

বেলারুশ এবং সেনজেন নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন (FAQ)

বেলারুশ এবং সেনজেন ভিসা নিয়ে আপনাদের মনে আরও কিছু প্রশ্ন থাকতে পারে। বেলারুশ কি সেনজেন ভুক্ত দেশ কিনা বা আরও পশ্ন, তাই নিচে কয়েকটি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলোঃ

প্রশ্ন: বেলারুশ কি ইইউ সদস্য?

উত্তর: না, বেলারুশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নয়।

প্রশ্ন: সেনজেন ভিসা ছাড়া বেলারুশ থেকে ইউরোপ যাওয়া যায়?

উত্তর: না, সেনজেন ভিসা ছাড়া ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশে প্রবেশ করা সম্ভব নয়।

প্রশ্ন: বেলারুশ কবে সেনজেন চুক্তিতে যোগ দিতে পারে?

উত্তর: এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো নির্ভরযোগ্য ঘোষণা আসেনি। তবে, বেলারুশ যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের শর্তগুলো পূরণ করতে পারে, তাহলে ভবিষ্যতে সেনজেন চুক্তিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ বেলারুশ কাজের ভিসা নিয়ে সর্বশেষ খবর 

বেলারুশ এবং সেনজেন দেশগুলোর তালিকা

আপনার সুবিধার জন্য নিচে সেনজেনভুক্ত দেশ এবং বেলারুশের মধ্যে তুলনামূলক একটি তালিকা দেওয়া হলো যাতে আপনি জানতে পারেন বেলারুশ কি সেনজেন ভুক্ত দেশ কিনাঃ

এই টেবিলটি আপনাকে বেলারুশ এবং সেনজেন দেশগুলোর মধ্যেকার পার্থক্য বুঝতে সাহায্য করবে এবং আপনি আরও পরিষ্কার ভাবে জানতে পারবেন বেলারুশ কি সেনজেন ভুক্ত দেশ কিনা।

বেলারুশ থেকে সেনজেন দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য কিছু দরকারি পরামর্শ (ভ্রমণ টিপস)

যদি আপনি বেলারুশ থেকে সেনজেনভুক্ত কোনো দেশে ভ্রমণ করতে চান, তাহলে কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার। নিচে কয়েকটি টিপস দেওয়া হলোঃ

১. ভিসার জন্য আগে থেকে আবেদন করুনঃ ভ্রমণের আগে ভিসার জন্য আবেদন করুন। শেষ মুহূর্তের জটিলতা এড়াতে অন্তত দুই মাস আগে আবেদন করা ভালো।

২. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করুনঃ ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র, যেমন – পাসপোর্ট, ছবি, ভ্রমণ পরিকল্পনা, রিটার্ন টিকেট, এবং আর্থিক প্রমাণপত্র আগে থেকেই গুছিয়ে রাখুন।

৩. দূতাবাসের ওয়েবসাইটে নজর রাখুনঃ প্রতিটি দেশের দূতাবাসের নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে। সেখানে ভিসা সংক্রান্ত সব তথ্য বিস্তারিতভাবে দেওয়া থাকে।

৪. ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স করুনঃ অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স করা ভালো।

এই টিপসগুলো আপনার ভ্রমণকে আরও সহজ এবং নিরাপদ করতে সাহায্য করবে।

উপসংহার: তথ্য জেনে ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন

আশা করি, বেলারুশ কি সেনজেন ভুক্ত দেশ সেই সম্পর্কে আপনার মনের ধোঁয়াশা দূর হয়েছে। যদি আপনি ইউরোপ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন, তাহলে মনে রাখবেন বেলারুশ সেনজেনভুক্ত দেশ নয়। তাই, ভ্রমণের আগে ভিসা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে জেনে আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন। সবসময় সরকারি ওয়েবসাইট এবং নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন। আপনার ভ্রমণ সুন্দর ও নিরাপদ হোক!

যদি এই বিষয়ে আপনার আরও কিছু জানার থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আর হ্যাঁ, লেখাটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না!